নতুন ভোর, নতুন বছর, নতুন প্রত্যাশা। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর প্রথম সকাল ছিল কুয়াকাটার বেলাভূমিতে অপার মোহময়। দেশের একমাত্র সৈকত যেখানে একই স্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত মত বিরল সৌন্দর্য। তাই বছরের প্রথম প্রভাতের সূর্যোদয় উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ছুটে এসেছেন ‘সাগরকন্যা’ কুয়াকাটায়।
তবে এসএসসি পরীক্ষার কারণে পর্যটক সংখ্যা খুবই কম। পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা জানান এবারই প্রথম পহেলা বৈশাখে কাঙ্খিত পর্যটক দর্শনার্থীদের ভীড় নেই। আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গুলোর বেশির ভাগই খালি পরে রয়েছে। নেই ব্যস্ততা, নেই কর্ম চাঞ্চল্যতা। হতাশ ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১ বৈশাখ) খুব ভোরে সৈকতের বালুকাবেলায় জড়ো শত শত পর্যটক দর্শনার্থী। কেউ এসেছে পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, আবার কেউ এসেছে একান্ত নিজের অবকাশ যাপনে। নতুন বছরের প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানাতে ভ্রমণপ্রিয় মানুষরা প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে ছুটে গেছেন সৈকতে।
ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক রাফি ইসলাম জানান, “বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে। সূর্যোদয়ের ওই মুহূর্তের অনুভূতি কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। সত্যিই অনন্য সেই দৃশ্য।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ❝যুব পান্থ নিবাস❞ এর অনুসন্ধান কক্ষে কর্তব্যরত ভবেশ রায় জানান, পর্যটন হলিডে হোমস ও যুব পান্থ নিবাস মিলে দু’টি ইউনিটে ৭৬ টি কক্ষ রয়েছে। আজ পহেলা বৈশাখে মাত্র একটি রুম বুকিং রয়েছে। বলা যায সবই খালি।
তবে পর্যটকদের উপস্থিতি নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর যেখানে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক আসে, এবার সেই সংখ্যাটা একেবারেই কম। তাদের মতে, বাংলা ১৪৩১ সালের শেষ সূর্যাস্ত আর ১৪৩২ সালের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে মানুষের আগ্রহ থাকলেও, এসএসসি পরীক্ষা সহ নানা কারণে ভিড় কমেছে। এছাড়াও ঈদের লম্বা ছুটিতে ভ্রমণ শেষ করেছে বেশির ভাগ পর্যটক দর্শনার্থীরা। এ কারনেও এ বছর পহেলা বৈশাখে পর্যটকদের ভীড় কম বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটার এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর অনন্য বৈশিষ্ট্যই প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে করে তোলে আলাদা। এই দিনের সকালের সূর্যোদয়কে কেন্দ্র করে সৈকতে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে এবছর ভীড় কম হলেও আনন্দ উৎসবেই কেটেছে আগত পর্যটক দর্শনার্থীদের। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন, সমুদ্রে গোসল, হই হুল্লোড়ে মেতে ওঠে পর্যটকরা। প্রচন্ড গরমের মাঝে সমুদ্র ছুঁয়ে আসা শীতল বাতাসের পরশে প্রশান্তির ছোয়ায় নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির মাঝে।
আগত পর্যটকরা জানিয়েছেন, বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখার এই অভিজ্ঞতা তাদের জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে। নতুন আলোর পরশে তারা শুরু করেছেন জীবনের নতুন অধ্যায়। তাদের আশা প্রতিদিন যেন এমন সুন্দর সকাল দিয়েি শুরু হয়। সকল মানুষ সুখে শান্তিতে কাটাতে পারে। সুন্দর এই ভোরের মত সুন্দর হোক আগামীর এই পথচলা” এমনটাই প্রত্যাশা পর্যটক দর্শনার্থীদের।
হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, পহেলা বৈশাখকে ঘিরে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক দর্শনার্থীদের আগমন ঘটলেও এবছরের চিত্র ভিন্ন। অন্যান্য বছর হোটেল মোটেল রিসোর্ট গুলোতে রুম সংকট দেখা দেয়। এবছর আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গুলোর দশভাগ রুমও বুকিং হয়নি।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সৈকতের দর্শনীয় স্পটগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ, সেনাবাহিনীর টহল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের ইনচার্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান। ###